মু. বেলায়েত হোসেন, কর্ণফুলী :
একটি ইউনিয়ন পরিষদের ভেতর থানা, বিষয়টি অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, দীর্ঘ ২ যুগ ধরে কর্ণফুলী থানার কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে, চরলক্ষ্যা ইউনিয়নের ভাড়া কক্ষে। নেই নিজস্ব গাড়ী পাকিং ও ব্যারাক, যার ফলে আটককৃত কিছু গাড়ি মইজ্জ্যারটেক এর মহাসড়কে আর কিছু গাড়ি চরলক্ষ্যা বোর্ড বাজারের সড়কে পড়ে আছে বছরের পর বছর ধরে। নিজস্ব আবাসন ও দাপ্তরিক অফিস সঙ্কটে ভুগছে থানাটি।
নানান জটিলতা কাটিয়ে কর্ণফুলী থানা এলাকাটি উপজেলা সৃষ্টি হলেও কর্ণফুলী থানা এখনো পরিচালিত হচ্ছে সিএমপি’র অধিনে। ফলে একদিকে সিএমপির নির্দেশনা অন্যদিকে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিদের্শনা মেনে কার্যক্রম পরিচালনা করতে হচ্ছে থানা প্রশাসনকে। কর্ণফুলী থানার পরিধি বেড়েছে কিন্তু সুযোগ সুবিধা বাড়েনি।
সূত্রে জানা গেছে, কর্ণফুলী থানা কাম-ব্যারাক নির্মাণের জন্য সিডিএ কর্ণফুলী আবাসিক এলাকায় ১৫ দশমিক ১১ কাঠা জমি বরাদ্দ দেয় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। ২০১৪ সালের ৩০ জুন জারি করা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্মারকমূলে ১৫ কাঠা জমি কিনে নেয় সিএমপি। জমির মালিক চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে প্রায় এক কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়। পরবর্তীতে আরো দশমিক ১১ কাঠা জমি সিডিএ থেকে কেনা হয়। কিন্তু পুলিশ সদর দফতর থেকে ৮ তলাবিশিষ্ট থানা ভবন নির্মাণের যে নকশা পাঠানো হয়েছে, সেই নকশায় সিডিএ’র জায়গায় ভবন হবে না। নকশা অনুযায়ী আরো সাড়ে তিন কাঠা জমি প্রয়োজন। এতে থানা ভবন নির্মাণ কাজ থমকে যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপ পুলিশ কমিশনার (বন্দর) শাকিলা সুলতানা নবীন কণ্ঠকে জানান বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে, তিনি আরো জানান একটি থানার জন্য যে পরিমাণ জায়গা প্রয়োজন ততটুকু জায়গা বরাদ্ধ না পাওয়া স্থায়ী ভবন নির্মাণের বিষয়টি আটকে রয়েছে।
এ বিষয়ে কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ জহির হোসেন (পিপিএম) বলেন, ‘বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে, তবে এ বিষয়ে আমাদের উর্ধতন কর্মকর্তারাই ভালো বলতে পারবেন। তিনি আরো জানান বর্তমানে থানায় দু’জন পরিদর্শক, ১৯ জন উপ-পরিদর্শক, ১৬ জন সহকারী উপ-পরিদর্শক ও ৩০ জন কনস্টেবল কর্মরত আছেন।
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ে বন্দর, পটিয়া ও আনোয়ারা থানা ভেঙে গঠিত হয় চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) একটি গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন হলো কর্ণফুলী থানা। যেটি ২০০০ সালের ২৭ মে চরলক্ষ্যা ইউনিয়ন পরিষদ এর পুরাতন ভবনে কার্যক্রম শুরু হয়। পরিষদের জরাজীর্ণ-ভবনের কিছু অংশ মাসিক ৩৫ হাজার টাকা ভাড়ায় নেয়। পরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১ লক্ষ ৩০ হাজারে।
এভাবে ২ যুগ ধরে চলছে কিন্তু এখনো হয়নি কর্ণফুলী থানার নিজস্ব ভবন। তবে একটি সূত্র বলছে, কর্ণফুলী থানা কাম-ব্যারাক নির্মাণের জন্য জমি কেনা আছে। কিন্তু থানা ভবন নির্মাণের জন্য পুলিশ সদর দফতরে পাঠানো নকশা জটিলতার কারণে কাজটি থমকে রয়েছে।
আরও জানা যায়, জাতীয় অর্থনীতিতে খুবই গুরুত্ব বহন করে কর্ণফুলী তীরবর্তী এ থানা অঞ্চল। পাঁচ ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত প্রায় তিন লাখ লোক অধ্যুষিত কর্ণফুলী উপজেলার আয়তন প্রতিষ্ঠাকালে আয়তন ১৩৬.৫৯ বর্গ কিলোমিটার হলেও নতুন করে তার পরিধি বেড়েছে। কর্ণফুলী উপজেলাতে পটিয়া থানাধীন যে ১১টি ওয়ার্ড ছিল তা কর্ণফুলী থানাতে প্রবেশ করেছে।
এখানে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান কাফকো, সিইউএফএল, বেসরকারি রপ্তানি প্রক্রিয়া অঞ্চল-কেপিইজেড ছাড়াও কর্ণফুলী নদীর তীরে শতাধিক বড় মাঝারি শিল্প কারখানা, বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে।
কর্ণফুলী থানার অধীনে তিনটি ফাঁড়ি-শাহমীরপুর, শিকলবাহা ও বন্দর পুলিশ ফাঁড়ি এবং তিনটি ক্যাম্প- কাফকো, কেপিইজেড ও শিকলবাহা বিদ্যুৎকেন্দ্র পুলিশ ক্যাম্প পরিচালিত হচ্ছে। এ রয়েছে একটি পুলিশ বক্সও।
পুলিশ সদস্যরা জানান, অস্থায়ী থানা ভবন গ্রামের ভিতরে হওয়ায় ঘটনাস্থলে আসা যাওয়া করতে অসুবিধা হয়। একইভাবে থানায় সেবা নিতে আসা লোকজনকেও ভোগান্তি পোহাতে হয়। প্রতিটি থানায় নারী-পুরুষের জন্য আলাদা হাজতখানা রাখার বিধান থাকলেও কর্ণফুলী থানায় নেই নারী হাজতখানা। কক্ষ স্বল্পতার কারণে আটক নারীদের রাখা হচ্ছে ডিউটি অফিসারের কক্ষে। তাছাড়া পর্যাপ্ত খালি জায়গা না থাকায় জব্দ করা গাড়ি ও মালামাল রাখতে সমস্যায় পড়তে হয়। অস্থায়ী ব্যারাকে পুলিশ সদস্যদের থাকার জায়গার সংকুলান হয় না।
যাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে কষ্ট হলেও নিরুপায় হয়ে নিজেকে মানিয়ে নিচ্ছে এসব পুলিশ কর্মকর্তারা। রোদ, বৃষ্টি আর শীতে অরক্ষিত ব্যারাকে থাকা মানুষগুলোর কষ্ট যেন নিত্যসাথী। ব্যারাকে জায়গা না থাকায় গাঁদাগাদি করে থাকতে হয় তাদের। অনেককে আবার থাকতে হয় ভাড়া বাড়িতে। সেক্ষেত্রে মহিলা সিপাহীদের পড়তে হয় নানা বিড়ম্বনায়। অনেকে দুরে থাকার ফলে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারছে না। একই টয়লেট ব্যবহার করে পুলিশ ও আসামিদের। পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা না থাকার কারণে পুলিশ, আসামি ও থানায় আসা সাধারণ মানুষকে পড়তে হচ্ছে নানা বিড়ম্বনায়ও।
অপরদিকে দীর্ঘ ২ যুগেরও বাড়েনি একটি ফাঁড়ি কিংবা পুলিশ বিট। বেড়েছে দায়িত্ব ও পরিধি। যদিও বিভিন্ন এলাকায় বিট রয়েছে বলে শোনা যায়। বর্তমানে থানা এলাকায় বেড়েছে বড় বড় মিল ফ্যাক্টরী, কারখানা, আবাসন, বিদ্যুৎ কেন্দ্র, শিপইর্য়াড, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার সংখ্যা। এছাড়া থানার অধীনে রয়েছে দর্শনীয় পার্কির চর ও নতুন ব্রিজ ( দক্ষিণপাড়)। এ অবস্থায় থানার দূরবর্তী গ্রামগুলোতে পুলিশের সেবা পৌঁছাতে দেরি হয়। এতে গ্রামবাসীর ভোগান্তি কমাতে ও নিরাপত্তা বাড়াতে নতুন করে পরিধি বাড়ায় নতুন ফাঁড়ির খুব দরকার বলে সাধারণ মানুষের মন্তব্য।
২০১৬ সালের ৯ মে পটিয়া উপজেলার ৫টি ইউনিয়নকে আলাদা করে কর্ণফুলী উপজেলার উন্নীত করার সিদ্ধান্ত অনুমোদন দিয়েছিল প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি (নিকার)। যা অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখিয়েছেন এলাকার সংসদ সদস্য ও সাবেক ভূমিমন্ত্রী আলহাজ্ব সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। এখন দরকার শুধু মানুষের সেবাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করা।
Discussion about this post