মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন, কর্ণফুলী (চট্টগ্রাম) :
পার্বত্য চট্টগ্রামের বুকে প্রকৃতির অপরূপ নৈসর্গিক নিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে রাঙ্গামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলা। আর কাপ্তাই উপজেলা অনন্য পাহাড়, লেকের অথৈ জলরাশি এবং চোখ জুড়ানো সবুজের সমারোহে। ১১,০০০ বর্গ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত এই কৃত্রিম হ্রদ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে আয়তনে সর্ববৃহৎ। এখানে চোখে পড়ে ছোট বড় পাহাড়, আঁকাবাঁকা পাহাড়ি রাস্তা, ঝর্ণা আর জলের সাথে সবুজের মিতালী। একদিকে যেমন পাহাড়ে রয়েছে বিভিন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণী সম্ভার তেমনি লেকের অথৈ জলে রয়েছে বহু প্রজাতির মাছ ও অফুরন্ত জীববৈচিত্র। লেকের চারপাশের পরিবেশ, ছোট ছোট দ্বীপ, নানাবিধ পাখি এবং জল কেন্দ্রিক মানুষের জীবনযাত্রা আপনাকে মুগ্ধ করে রাখবে প্রতি মূহুর্ত। কৃত্রিম হলেও প্রকৃতি তার সমস্ত রুপে উজাড় করে সাজিয়েছে কাপ্তাই হ্রদকে।
গত ১৯ এপ্রিল শুক্রবার সকাল ৯ টায় চট্টগ্রামের কর্ণফুলী শাহ আমানত টোল প্লাজা থেকে কালারপোল হাজী ওমরা মিয়া চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের ২০০০ ব্যাচ বন্ধুদের নিয়ে বাস যোগে রাঙ্গামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলার লঞ্চ ঘাটে পৌঁছে যায় সকাল সাড়ে এগারো টায়।
আকাঁ-বাকাঁ রাস্তার পথ ধরে বন্ধুদের হইহূলাই আড়াই ঘন্টার পথ নিমিষেই পৌঁছে যাওয়া
গাড়ি থেকে নামার যেন আর তর সইছে না। এরপর হালকা খেয়ে পাশের লঞ্চঘাট থেকে ৪০০০ টাকায় ছোট্ট একটি লঞ্চ চুক্তি করলাম রাঙ্গামাটি যেতে। শুরু হলো লঞ্চ ভ্রমণ। দেশের বৃহত্তম ও বিশ্বের অন্যতম বড় কৃত্রিম হ্রদ ভ্রমণ! রোমাঞ্চের ডালপালা মেলে দিল। সবাই রোমাঞ্চিত।
লঞ্চঘাট থেকে কয়েকমিনিট যেতেই মনে হয় বিশাল সাগরে এসে পড়লাম। চারিদিকে অথৈ পানি আর পানি। একটু দূরে ছোট ছোট দ্বীপ। কিছুদূর যেতেই পাহাড়দেওয়াল। পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে ছোট ছোট বাসা। সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে আমরা লঞ্চ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। জেলেদের মাছধরার দৃশ্য আর মাথার ওপর বিভিন্ন পাখির ওড়াউড়ি, কী মনোরম! আহা, কী দৃষ্টিসুখ! প্রকৃতির মনোরম দৃশ্যের সাথে রোদ দুপুরের আলোয় আলোকিত-রোমঞ্চিত মনে সবাই ছবি তুলতে ব্যস্ত।
কাপ্তাই থেকে রাঙ্গামাটির প্রায় ৩৫ কিলোমিটারে পথ যেতে সময় লাগে ৩ ঘন্টার মত। (শুরু থেকে লঞ্চের গতি ছিল কর্ণফুলীর সাম্পানের ন্যায়)
রাঙ্গামাটি তবলছড়ি লঞ্চ ঘাটে নেমে দুপুরের খাবার সেরে পলোয়িংপার্ক ঘুরে লঞ্চ পৌছে গেল রাঙ্গামাটি ঝুলন্ত সেতু এলাকায়। ঈদ মৌসুম হওয়ায় এ স্পট ছিলো লোকে লোকারণ্য।
২০ টাকায় প্রবেশ টিকিট নিয়ে সেতুর উভয় পাশে ঘুরেফিরে আবার উঠলাম লঞ্চে। এবার কাপ্তাই হ্রদের পানিরাশি যে সবুজ। চারিদিকের সবুজ পাহাড়ের প্রতিচ্ছায়ায় এমন। প্রায় ৪৫ মিনিট পানিভ্রমণ শেষে নান্দনিক দ্বীপে নেমে সবাই সাতাঁর কাটা ও লাফালাফি করে গোসল সেরে আদিবাসী গ্রামে আসতেই সন্ধ্যা গড়ায়।
আদিবাসী গ্রামের পাহাড়ি আদিবাসীদের ব্যবহারে সবাই মুগ্ধ। সেখানেই সেরে নিলাম হালকা নাস্তা।
রাত ৮ টায় কাপ্তাই ঘাটে পৌঁছে বাড়ি ফিরতে গাড়িতে উঠে গেলাম।
এবার র্যাফেল ড্রয়ের পালা। রমজান আলীর রমু পরিচালনায় প্রথম পুরস্কার জিতে নিল মোহাম্মদ মুছা।
পুরো ভ্রমণ যাত্রায় গ্রুপ লিডার ছিলেন এম এন আবছার, মোহাম্মদ মুছা, এডভোকেট হারুন। সহযোগিতায় ছিলেন গিয়াস, নাজিম, রমু, খুরশেদ, ফারুক।
Discussion about this post