মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন, কর্ণফুলী (চট্টগ্রাম) :
এস আলম রিফাইন্ড সুগার মিলের গোডাউনে অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যাওয়া কাঁচামাল কর্ণফুলীতে মেশার পর নদীর পানিতে অ্যাসিডের অস্তিত্বের প্রমাণ পেয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। এ কারণে নদীর পানি মৎস্য ও জলজ প্রাণীর অনুপযোগী হয়ে উঠেছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে অনতিবিলম্বে চিনিকলের গোডাউনের পোড়া বর্জ্য নদীতে ফেলা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন চট্টগ্রামে জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান।
বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার ইছানগরে এস আলম রিফাইন্ড সুগার মিল পরিদর্শনে এসে এ তথ্য জানিয়েছেন পরিবেশ অধিদপ্তর, চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক ফেরদৌস আনোয়ার।
তিনি বলেন, ‘দুদিন আগে আমাদের একটি টিম সুগার মিলের গোডাউন থেকে নদীতে যাওয়া পানি কর্ণফুলী নদীর পানির নমুনা সংগ্রহ করে। এখন পর্যন্ত আমরা একটি উপাদানের পরীক্ষা শেষ করতে পেরেছি। পরীক্ষায় দেখতে পেয়েছি পানিতে অ্যাসিড রয়েছে। পানির যে স্ট্যান্ডার্ড মান তার চেয়ে নিচের দিকে রয়েছে। এ অবস্থায় জলজ প্রাণীদের বেঁচে থাকা কঠিন। তাই ওগুলো জলজ প্রাণী) পানিতে ভেসে উঠছে।’
তিনি বলের, ‘সব পরীক্ষা শেষ হতে পাঁচদিন লাগবে। রিপোর্ট হাতে পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি তদন্ত কমিটিকে এ রিপোর্ট দেওয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘এখনো পোড়া চিনি মিশ্রিত লাভা নদীতে যাচ্ছে। আমরা কারখানা কর্তৃপক্ষকে এই মুহূর্তে বর্জ্য মিশ্রিত পানি নদীতে ফেলা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছি। তারা তাদের কারখানার আশপাশে এ বর্জ্য মেশা পানি ফেলার ব্যবস্থা করবেন।’
চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণে জেলা প্রশাসন ব্যবস্থা নিয়েছে জানিয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক বলেন, ‘আমরা তিনদিন আগে থেকেই বাজার তদারকি করছি। এরই মধ্যে বাজার নিয়ন্ত্রণে এসেছে।’
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে এস আলমের কারখানার পেছনে ইছানগর-বাংলাবাজার ঘাট এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, পোড়া চিনির লাভায় কালো রঙ ধারণ করেছে কর্ণফুলীর পানি। পাশের নালা বেয়ে নদীতে মিশছে শত শত কিউসেক বর্জ্য মেশা পানি। পোড়া চিনির গন্ধে দূষিত হচ্ছে বাতাস। কর্ণফুলী নদীর পানিতেও মরা মাছ ভাসতে দেখা যায়।
নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক আলিউর রহমান বলেন, ‘কার্বন, হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের একটি যৌগ চিনি। কার্বন ও অক্সিজেন দুটোই আগুন জ্বলতে সহায়ক। ৩৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রায় অপরিশোধিত চিনি গলে ভোলটাইল কেমিক্যালে (ঝুঁকিপূর্ণ রাসায়নিক) পরিণত হয়। সেই ভোলটাইল কেমিক্যাল এস আলম সুগার রিফাইনারির ভস্মীভূত বর্জ্য কর্ণফুলী নদীতে এসে সম্পূর্ণ নদী এখন বিবর্ণ-বিষাক্ত হয়ে পড়েছে। এতে নদীর মাছ ও অন্য প্রাণিসম্পদ মরে পানিতে ভাসছে।’
কর্ণফুলীর দূষণ দূষণের ফলে ইকোসিস্টেম দারুণভাবে বিপন্ন করছে। পানির দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রা কমে গিয়ে মাছ মৃত অবস্থায় ভেসে উঠছে। এছাড়া আরও বহুমাত্রিক বিপর্যয় ঘটছে, যা আমরা দেখতে পাচ্ছি না।’
Discussion about this post