মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন, কর্ণফুলী : চট্টগ্রামের কর্ণফুলী কেইপিজেড এলাকা থেকে হাতি অপসারণের ১ দফা দাবী নিয়ে সড়ক অবরোধ করে রেখেছে স্থানীয় জনসাধারণ।
আজ বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) ভোর ৬টা থেকে এ অবরোধ কর্মসূচি শুরু হয়।
ভোরের সূর্য উঠার পূর্বে কর্ণফুলী-আনোয়ারার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে কেইপিজেড দৌলতপুর স্কুল এলাকায় জোড় হয়ে পিএবি সড়ক বন্ধ করে বিক্ষোভ করতে দেখা যায় বিক্ষোভকারীদের।
এসময় বিক্ষোভকারীদের সূত্রে জানা যায় -বিগত কয়েক বছর ধরে এ বন্য হাতিগুলো কর্ণফুলী-আনোয়ারায় তান্ডব চালিয়ে কয়েক শত মানুষের জান-মালের ক্ষতি করেছে। গত শনিবার (২২ মার্চ) রাত ১টার দিকে উপজেলার বড়উঠান (৫ নম্বর ওয়ার্ড) শাহমীরপুর জমাদার পাড়ার মোহাম্মদ ইব্রাহীমের শিশু পুত্র মোঃ আরমান জাওয়াদ হাতির আক্রমণের শিকার হয়ে মারা যায়। এরপর পরের দিন রবিবার সকাল ৮টা থেকে মৃত শিশুটির লাশ নিয়ে মানববন্ধন ও সড়ক অবরোধ করে স্থানীয় জনতা। উপজেলা প্রশাসন ও কেইপিজেড এর প্রতিনিধিদল আন্দোলনকারীদের আশ্বাস প্রদাণ করলে তারা সড়ক অবরোধ তুলে নেয়।
৪ দিনের আল্টিমেটাম শেষ হলেও কর্তৃপক্ষ কোনো প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ না করায় আজ আবারও সড়ক অবরোধ করে স্থানীয় জনসাধারণ।
অবরোধকারীরা জানান -আমরা সংশ্লিষ্ট সংস্থা চট্টগ্রাম বন বিভাগ, কেইপিজেড কর্তৃপক্ষ ও কর্ণফুলী উপজেলা প্রশাসন কোনো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিত্য ব্যর্থ হওয়ায় আমরা বাধ্য হয়ে পুনরায় সড়ক অবরোধ কর্মসূচি দিয়েছি। এসময় তারা দাবী করেন হাতির সাথে মানুষের সহাবস্থান করে বসবাস করা মোটেও সম্ভব নয়। এ হাতিগুলো বারবার মানুষের জান মালের ক্ষতি করেছে। এই এলাকায় হয়তো হাতি থাকবে না হয় মানুষ থাকবে এর বিকল্প আর কোন পথ নেই, এখান থেকে হাতি অপসারণ না করা পর্যন্ত আমাদের এই অবস্থান কর্মসূচি সড়ক অবরোধ অব্যহতভাবে চলমান থাকবে।
সড়ক অবরোধ চলাকালীন ভোগান্তিতে পড়ছেন চাকরিজীবীরা। আটকা পড়েছে বিভিন্ন খাদ্য পণ্যের গাড়ি। এদিকে বিক্ষোভকারীদের দাবি হাতির বিষয়টি নিরসনের জন্য প্রশাসন (চার) ৪দিনের সময় নিয়েও তারা কোনো সুরাহা করতে না পারায় তারা আবারও আন্দোলনে নেমেছেন এবং হাতির বিষয়টির স্থায়ী কোনো সমাধান না আসা পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
সর্বশেষ খবর পাওয়া আন্দোলনকারীরা কর্ণফুলীর দৌলতপুর স্কুল এলাকা এবং আনোয়ারা উপজেলার সিইউএফএল সড়কের জাইল্লাঘাটা এলাকায় সড়ক অবরোধ করে। এতে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।
আন্দোলন চলাকালীন সময়ে সেনাবাহিনীর দুটি টিমকে ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনার চেষ্টা করতে দেখা যায়।
আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ওয়াসিম আকরাম বলেন, বন ও পরিবেশ উপদেষ্টা আমাদেরকে এসে কিংবা ফোনে আশ্বাস দিতে হবে কতদিনের মধ্যে হাতির বিষয়টি নিরসন করা যায়। তাহলেই আমরা আন্দোলন থেকে সড়ে দাঁড়াব। আর এইখানে কেপিজেড নীরব ভূমিকা পালন করে আসছে।
এ ব্যাপারে কেইপিজেডের সহকারী ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুশফিকুর রহমান বলেন, এটি বৃহত্তর একটি শিল্প অঞ্চল। কেইপিজেডে কখনো হাতি ছিল না। হাতি সরাতে আমরাও চাই এবং বনবিভাগকে একাধিকবার হাতি সরাতে চিঠি দিলেও তাদের হাতি সরাতে কোনো পদক্ষেপ নেননি। আর স্থানীয় লোকজন কি কারণে কেইপিজেডকে প্রতিপক্ষ ভাবেন আমরা বুঝিনা। হাতি সরানোর জন্য কোনো সহযোগিতা প্রয়োজন হলে আমরা অবশ্যই পাশে থাকব।
কর্ণফুলী জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) জামাল উদ্দিন চৌধুরী বলেন, হাতি নিরসনের বিষয়টি সম্পন্ন উপজেলা প্রশাসন ও বনবিভাগের। যদিও জনগণের ভোগান্তি না হয় সেজন্য আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।