মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন, কর্ণফুলী : চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার চরপাথরঘাটায় মো. শহিদুল আলম জুয়েল (৩২) নামে এক যুবককে অপহরণের ঘটনায় ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
শুক্রবার (৭ মার্চ) শহিদুল আলম নিজেই বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। মামলার নম্বর নং ০৮। মামলায় আরও ১৩-১৪ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ শরীফ।
অভিযুক্তরা হলেন-০১। মোঃ মাঈন উদ্দিন (৪৬), পিতা-মৃত আবুল হাশেম প্রঃ হাশেম মোল্লা, মাতা-খায়রুন নেসা, সাং-খোয়াজনগর, ০৪নং ওয়ার্ড, আব্বাস মেম্বারের বাড়ী ০২। মোঃ শাহেদুর রহমান প্রঃ শাহেদ (৫০), পিতা-হাজী জামাল আহমেদ, মাতা-হুরতাজ বেগম, সাং-ইছানগর, ০৮নং ওয়ার্ড, ০৩। মির্জা আজাদ (৪০), পিতা-শের আলী মির্জা, সাং-ইছানগর, ০৮নং ওয়ার্ড, মির্জা আজাদের বাড়ী ০৪।
মোঃ আব্দুর রাজ্জাক মেম্বার (৪০), পিতা-হাজী মহব্বত আলী, মাতা-রহিমা বেগম, সাং-ইছানগর, ০৯নং ওয়ার্ড, রাজ্জাক মেম্বারের বাড়ী, ০৫। জাফর আহমদ (৫৮), পিতা-অজ্ঞাত, সাং-ইছানগর, ০৯নং ওয়ার্ড, ০৬। মোঃ ইমরান পাটোয়ারী (২৯), পিতা-মৃত হাজী ছবির আহম্মদ, মাতা-লায়লা বেগম, সাং-খোয়াজনগর, ০৬নং ওয়ার্ড, জাহাঙ্গীর মেম্বারের বাড়ী, ০৭। আব্দুর শুকুর (৩৫), পিতা-হাজী মহব্বত আলী, মাতা-রহিমা বেগম, সাং-ইছানগর, ০৯নং ওয়ার্ড, রাজ্জাক মেম্বারের বাড়ী, ০৮। জহিরুল আলম (৪০), পিতা-মৃত শাহ আলম, সাং-ইছানগর, ০৮নং ওয়ার্ড, উভয়ে চরপাথরঘাটা ইউনিয়ন ও কর্ণফুলী উপজেলার বাসীন্দা।
এজাহারে জুয়েল উল্লেখ করেন, তিনি একজন ব্যবসায়ী। অভিযুক্তরা বিভিন্ন সময় তাকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে আসছিল। গত ৫ মার্চ রাত ১০টার দিকে তিনি ইছানগর জামে মসজিদে তারাবির নামাজ শেষে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলেন। রাত সাড়ে ১১টার দিকে বাড়ি ফেরার পথে চরপাথরঘাটার সাইক্লোন সেন্টারের কাছে পৌঁছালে, তিনটি সিএনজিযোগে অজ্ঞাত ৯-১০ জন এসে দাবি করে যে তার বিরুদ্ধে মামলা আছে। জুয়েলকে তারা ছাত্র পরিচয় দেন।
এরপর তারা তাকে জোরপূর্বক সিএনজিতে তুলে নেয়। কিন্তু থানায় না নিয়ে, তাকে শাহ আমানত সেতু হয়ে ফিশারি ঘাটে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে একটি কালো প্রাইভেট কারে করে লালদীঘির মাঠে নেওয়া হয় এবং সেখানে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কিছুক্ষণ পর, মাস্ক পরিহিত ৯-১০ জন লোক তাকে আরও চারজনের কাছে হস্তান্তর করে। এরপর একটি সাদা প্রাইভেট কারে তাকে চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন জায়গায় ঘোরানো হয়।
রাত সাড়ে ১টার দিকে, গাড়িটি কাজীর দেউড়ীর রয়েল হাট রেস্টুরেন্টের সামনে দাঁড়ায়। সেখানে মাস্ক পরিহিত ব্যক্তিরা জুয়েলকে গাড়ির মধ্যে রেখে দরজা লক করে দেয়। ৩০ মিনিট পর, তারা প্রশাসনের লোক পরিচয়ে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। জুয়েল ১০ লাখ টাকা দিতে অপারগতা জানালে, তারা ৫ লাখ টাকা দাবি করেন। পরে, মাস্ক পরা ৪ জন লোক জুয়েলের মোবাইল ফোন থেকে সাজ্জাদ নামের একজনের নম্বরে কল করে তার ছোট ভাই মুন্নার সঙ্গে কথা বলেন এবং ৫ লাখ টাকা দাবি করেন। একপর্যায়ে, ৩ লাখ টাকা হলে তাকে ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। যা ভিকটিম জুয়েল বারবার তার পিতাকে মুঠোফোনে জানান বলে উল্লেখ করেছেন।
তার কিছুক্ষণ পর, কর্ণফুলী থানার ওসি ও অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তারা কাজীর দেউড়ী মোড়ে গাড়ি তল্লাশি করতে গিয়ে মাস্ক পরা ৪ জন বলেন, ‘টাকা লাগবে না, আমরা তোমাকে ছেড়ে দেবো, চিৎকার করো না।’ এরপর, তারা গাড়িটি ঘুরিয়ে হল টোয়েন্টিফোর এর সামনে নিয়ে যায়। রাত সাড়ে ৩টার দিকে, জুয়েলকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেওয়া হয় এবং নামার সময় তারা বলেন, এজাহারে উল্লেখ করা আসামিরা তাদেরকে প্ররোচিত করেছে তাকে এনে টাকা আদায় করার জন্য।
পরে, জুয়েল একটি রিকশায় করে কোতোয়ালী থানায় গিয়ে ওসি কোতোয়ালী ও সেখানে উপস্থিত ওসি কর্ণফুলীকে ঘটনার বিস্তারিত জানান।
এ বিষয়ে, কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ শরীফ বলেন, ‘অপহরণের ঘটনায় মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’