সরকারের নির্ধারিত চাহিদার বিপরীতে কাঙ্ক্ষিত লবণ উৎপাদন হলেও মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিদেশ থেকে লবণ আমদানি অব্যাহত রেখেছে কিছু সংখ্যক মিল মালিক সিন্ডিকেট। এতে দেশে উৎপাদিত এক বস্তা (২ মণ) লবণের মূল্য পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৬০০ টাকা। বিগত মৌসুমেও মানভেদে একই পরিমাণ লবণ বিক্রি করে প্রান্তিক চাষিরা পেতেন ১২শ থেকে ১৬শ টাকা পর্যন্ত। কিন্তু মিল মালিক সিন্ডিকেটের কাছে সরকার জিম্মি হয়ে পড়ায় কক্সবাজারের উৎপাদিত লবণের দাম একেবারে তলানিতে পৌঁছেছে। সেই মিল মালিকদের সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া, বিদেশ থেকে লবণ আমদানির অনুমতি না দেওয়া, উৎপাদিত দেশীয় লবণের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করাসহ দেশীয় লবণ শিল্প বাঁচানোর আকুতি জানিয়ে গতকাল বুধবার সকালে চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়ক অবরোধ করেন শত শত লবণ চাষি।
মহাসড়কের চকরিয়ার খুটাখালী স্টেশনের উত্তর পাশে মহাসড়কের ওপর উৎপাদিত লবণ ফেলে এবং কাফনের কাপড় পরে অভিনব এই প্রতিবাদে শামিল হন প্রান্তিক চাষি, লবণ ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে লবণ শিল্পের সঙ্গে জড়িত সর্বসাধারণও। প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে আগামীতে আরও বড় ধরনের কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নামারও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। এদিকে লবণ ফেলে দিয়ে এবং কাফনের কাপড় পরে অভিনব এই প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে মহাসড়কের উভয় দিকে আটকা পড়ে পর্যটক, যাত্রী ও পণ্যবাহী হাজারো যানবাহন। এতে চরম দুর্ভোগে পতিত হন যাত্রী–সাধারণ। তবে প্রশাসনের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে প্রায় ১ ঘণ্টা পর অবরোধ তুলে নেওয়া হলে মহাসড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়ে আসে।
প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য দেন প্রান্তিক চাষিসহ বড় বড় লবণ ব্যবসায়ীরা। এতে বক্তব্য দেন জেলার বৃহৎ লবণ ব্যবসায়ী ও চকরিয়া অ্যাডভোকেট এসোসিয়েশনের সভাপতি শহীদুল্লাহ চৌধুরী, কক্সবাজার লবণ চাষি ও ব্যবসায়ী সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি জামিল ইব্রাহিম চৌধুরী, সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান খোকন মিয়া, খুটাখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুর রহমান, সাবেক কলেজ অধ্যক্ষ এস এম মনজুর আলম, শোয়াইবুল ইসলাম সবুজ, ব্যবসায়ী আবদুল গফুর, এম জাফর আহমদ, আনিসুর রহমান, ফরিদুল ইসলাম, মনছুর আলম, নাছির উদ্দীন, আবুল হাসেম, মেম্বার নুরুল আজিম সবুজ, আরফাত কামাল জিকু, সমিতির সদস্য নুরুল আজম, নজরুল ইসলাম, সিরাজুল মোস্তফা, জাফর আলম, হাবিবুল্লাহ মিজবা, হারুণুর রশীদ, মৌলভী সেলিম উদ্দিন, ফিরোজ বখ্ত তোয়াহা, নাজিম উদ্দিন, শওকত আমিন, মৌলভী আবদুল্লাহ প্রমুখ।
কক্সবাজার লবণ চাষি ও ব্যবসায়ী সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি জামিল ইব্রাহিম চৌধুরী বলেন, বিগত মৌসুমেও দেশে উৎপাদিত ২ মণ লবণের মূল্য পাওয়া যেত মানভেদে ১২শ থেকে ১৬ টাকা পর্যন্ত। কিন্তু এবার প্রতি বস্তার বিপরীতে পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৬০০ টাকা। এর কারণ ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি আরও বলেন, বর্তমান অন্তর্র্বতী সরকারের দায়িত্বশীলদের মিথ্যা তথ্য দিয়ে এবং শিল্পখাতে ব্যবহারের দোহাই দিয়ে বিদেশ থেকে লবণ আমদানি করছেন মাত্র ৬–৭ জনের বড় বড় মিল মালিকদের একটি সিন্ডিকেট। এতে দেশীয় তৈরি উৎপাদিত লবণের দাম একেবারে নেমে গেছে। এই অবস্থায় বিদেশ থেকে আরও বিপুল পরিমাণ লবণ আমদানির পায়তারা করায় একেবারে ধ্বংস হওয়ার পথে দেশীয় একমাত্র লবণ শিল্প। তাই সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, বাণিজ্য ও শিল্প উপদেষ্টার প্রতি আমাদের আকুতি হচ্ছে, দেশীয় লবণ শিল্পকে বাঁচাতে হলে এলসি খুলে বিদেশ থেকে লবণ আমদানির প্রচেষ্টা বন্ধ করে দিতে হবে।