মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন, চট্টগ্রাম : কিছু অসাধু রাজনৈতিক নেতা ও ব্যবসায়ীরা পাটনীজীবী সেজে চট্টগ্রামের ঘাটগুলো ইজারা নেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে ফলে শঙ্কায় পড়েছেন প্রকৃত পাটনীজীবী তথা কর্ণফুলীর ঘাটগুলোর মাঝিমাল্লারা। অন্যদিকে প্রকৃত মাঝিরা ঘাট না পেলে যাত্রীদের পারাপারে ব্যয় পাড়তে পারে মন্তব্য করেছেন সচেতন নাগরিক।
গতকাল রবিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডাক্তার শাহাদাত হোসেন এর নিকট স্মারকলিপি প্রদান করেন।
ঘাট ইজারা ও সিটি মেয়রের কার্যালয়ে আসার বিষয়ে জানতে চাইলে মাঝিদের প্রতিনিধি জাফর আহমেদ দৈনিক জনবাণীকে জানান চরপাথরঘাটা ব্রীজঘাট সাম্পান চালক কল্যাণ সমিতি, চট্টগ্রাম ইছানগর বাংলা বাজারঘাট সাম্পান টেম্পু মালিক সমিতি ও ইছানগর সদরঘাট টেম্পু মালিক কল্যাণ সমিতি ঘাট ইজারা স্থগিত আদেশ চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্টে ডিভিশন ১৫নং কোর্ট কর্তৃক রিট পিটিশন(১৩২৬/২০২৫) বিষয়টি মেয়রের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে মেয়রের সাথে কর্ণফুলীর মাঝিদের প্রতিনিধি দল স্বাক্ষাত করে।
সূত্রে জানা যায় ইজারা প্রক্রিয়ায় মাঝিদের অধিকার উপেক্ষিত করে ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক নেতাদের হাতে ঘাট ইজারা দিতে সকল প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে সেরেছেন একটি চক্র।
ঘাটগুলো তাদের হাতে চলে গেলে কর্মসংস্থান হারাবেন প্রকৃত মাঝি-মাল্লা (পাটনীজীবী) এবং ভোগাড়ির শিকার হবেন যাত্রীরা। এর আগে, ২০২২ সালে কর্ণফুলী সাম্পান মাঝি ফেডারেশন সিটি কর্পোরেশনের ইজারা নীতির বিরুদ্ধে মামলা করেছিল। পরবর্তীতে, নীতিমালার ১০ নম্বর শর্ত উত্তোলনের শর্তে ২০২৪ সালে বিভাগীয় কমিশনারের মধ্যস্থতায় সমঝোতায় পৌঁছানো হলে মামলা প্রত্যাহার করা হয়। তবে এবারও সিটি কর্পোরেশন ফেরিঘাট ইজারার জন্য দরপত্র আহ্বান করায় মাঝিদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তাদের দাবি, ইজারায় স্ব-স্ব ঘাটের পেশাদার মাঝিদের অগ্রাধিকার না দিলে তারা বেকার হয়ে পড়বেন এবং যাত্রীদেরও বাড়তি ভাড়া ও হয়রানির শিকার হতে হবে। পেশাদার মাঝিদের অভিযোগ, কর্ণফুলীর বিভিন্ন ঘাট ইতোমধ্যে বিত্তবান ও প্রভাবশালীদের দখলে চলে গেছে। প্রকৃত পাটনীজীবীরা ঘাটের অধিকার হারাচ্ছেন, কারণ বড় অংকের টাকার দরপত্র দিয়ে প্রভাবশালীরা ঘাটের ইজারা নিয়ে নিচ্ছেন। এতে প্রকৃত মাঝিরা কাজ হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ছেন। তাদের অভিযোগ, ঘাট ইজারাদাররা মাঝিদের প্রতিদিন চাঁদা দিতে বাধ্য করেন, অন্যথায় মাঝিদের হয়রানির শিকার হতে হয়। ফলে শত শত পেশাদার সাম্পান মাঝির জীবন-জীবিকা হুমকির মুখে পড়েছে। কর্ণফুলী নদী সাম্পান মাঝি কল্যাণ সমিতি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক লোকমান দয়াল বলেন, “নীতিমালা উপেক্ষা করে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে, যা পেশাদার মাঝিদের অধিকার হরণের শামিল।” তিনি হুঁশিয়ারি দেন, যদি এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না করা হয়, তাহলে কর্ণফুলীর সব ঘাট বন্ধ করে দেওয়া হবে এবং প্রয়োজনে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ফিরিঙ্গী বাজার ব্রীজ ঘাট সাম্পান সমিতির সভাপতি আবুল হোসেনও মাঝিদের স্বার্থ সংরক্ষণের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ইজারায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা জরুরি। এদিকে, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা এস.এম সরওয়ার কামাল বলেন, “নিয়ম মেনে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে এবং সর্বোচ্চ দরদাতাকে ইজারা দেওয়া হবে। তবে, কেউ আপত্তি জানালে তারা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।” তবে মাঝিরা বলছেন, নীতিমালায় তাদের অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা থাকলেও সিটি কর্পোরেশন সেই নিয়ম মানছে না। বর্তমান পরিস্থিতিতে ফেরিঘাট পরিচালনা নিয়ে নতুন করে আইনি লড়াই ও আন্দোলনের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। পেশাদার মাঝিরা দাবি তুলেছেন, ইজারার ক্ষেত্রে প্রকৃত সাম্পান মাঝিদের স্বীকৃতি ও সুরক্ষা দিতে হবে। তারা তাদের অধিকার রক্ষার জন্য আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছেন। অন্যদিকে, ইজারা প্রক্রিয়া নিয়ে বিতর্ক অব্যাহত থাকায় কর্ণফুলী নদীর যাত্রীসেবা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।