যাদের নদী পথে ব্যবসা-বাণিজ্য রয়েছে তারা খিযির (আঃ) সম্পর্কে ভালো জ্ঞান রাখেন। অনেকেই উনাকে খোয়াইজ খিযির নামেও ডেকে থাকেন। আজ থেকে ধারাবাহিকভাবে হযরত খিযির (আঃ) জীবনী প্রকাশিত হতে থাকবে। আশা রাখছি প্রতিটি পর্ব পড়ে আপনারা মন্তব্য পেশ করবেন।
প্রথমেই আসুন দেখি পবিত্র কোরান শরীফে খিযির (আঃ) (আমি এখানে তার নাম উল্লেখ্য করছি বোঝার স্বার্থে, লেখার সাথে থাকলে আপনি নিজেই বুজতে পারবেন আসল ঘটনা) কে নিয়ে কোন সুরায় উল্লেখ্য আছে? সুরা আল কাহফে একজন জ্ঞানী ব্যাক্তির কথা উল্লেখ্য হয়েছে কিন্তু কোন নাম বলা হয়নি, চলুন দেখি “এরপর তারা সাক্ষাৎ পেল আমাদের বান্দাদের মধ্যে একজনের, যাকে আমরা আমাদের কাছ থেকে অনুগ্রহ দান করেছিলাম ও আমাদের কাছ থেকে শিক্ষা দিয়েছিলাম এক বিশেষ জ্ঞান (সুরা আল কাহফ, আয়াত ৬৫)। তার মানে নাম বিহীন একজন জ্ঞানী ব্যাক্তির উল্লেখ্য আছে এই সুরায়, তাহলে প্রশ্ন আসতে পারে কেন ইনাকে খিজির বা খাদির (আঃ) নামে অভিহিত করা হচ্ছে?
এখানে চলে আসে হাদীসের প্রসঙ্গ। বুখারীর হাদীসে তার নাম “খাদির” উল্লেখ করা হয়েছে। খাদির অর্থ “সবুজ শ্যামল” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার নামকরণের কারণ প্রসঙ্গে বলেন যে, তিনি যেখানে বসতেন, সেখানেই ঘাস উৎপন্ন হয়ে যেত, মাটি যেরূপই হোক না কেন। [বুখারীঃ ৩৪০২]। তার মানে আমরা সুরা আল কাহফে উল্লেখিত একজন জ্ঞানী ব্যাক্তির সন্ধান পাই এবং সহীহ হাদীস দ্ধারা তার একটি নাম পাই। এ পর্যায়ে আমি অনুরোধ করব আপনাকে সুরা আল কাহফ পড়ার জন্য (সুরা কাহফের লিঙ্ক বাংলা অনুবাদ সহ সূরাঃ আল-কাহফ )। সুরা আল কাহফের ৬৫-৮২ আয়াত পর্যন্ত সুস্পষ্ট ভাবে মুসা (আঃ) এর সাথে এই জ্ঞানী ব্যাক্তির (খিজির আঃ) এর কিছু কর্মকান্ড বর্ননা আছে। চলুন সহজ ভাবে তা জেনে নেই।
একদিন হযরত মুসা (আঃ) বনী ইসরাইলীদের উদ্দেশ্যে ধর্মীয় বক্তব্য দিচ্ছিলেন, এমন সময় একজন তাকে জিজ্ঞাস করেন “এ জমানায় সর্বশ্রেষ্ঠ আলেম কে?” জবাবে মুসা (আঃ) বলেন “আল্লাহপাক আমাকেই সর্বাপেক্ষা অধিক ইলম (জ্ঞান) দান করছেন।” আল্লাহ পাক এই জবাব পছন্দ করলেন না, সাথে সাথে আল্লাহ পাক বললেন, “ তোমার তো উচিত ছিল উক্ত প্রশ্নের উত্তর আল্লাহর জ্ঞানের ওপর সোপর্দ করে দিয়ে বলতে, আল্লাহ পাকই অধিক অবগত আছে।” অতঃপর তার ওপর ওহী নাযিল করলেন, দু’ সাগরের সংযোগ স্থলে আমার এক বান্দা আছে, সে কোন কোন বিষয়ে তোমার থেকে অধিক জ্ঞানী। হযরত মুসা (আঃ) জিজ্ঞাস করলেন, “হে পরওয়ারদিগার, আপনার সে বান্দার নিকট কোন পথে যাওয়া যাবে?”
আল্লাহপাক বললেন তোমার থলের ভেতর একটা ভাজা (রান্না করা) মাছ রাখ, যে স্থানে ওই মাছটি হারিয়ে যাবে সেখানেই আমার ওই বান্দাকে পাবে। যথাবিহিত, হযরত মুসা (আঃ) তার খলিফা ইউশা ইবনে নুন ( এই নামটাও কিন্তু কোরান শরীফে নাই, তবে তাফসীর কারকদের মতে ইনিই হবেন) কে নিয়ে সমুদ্র অভিমুখে যাত্রা করে, এক জায়গায় গিয়ে হযরত মুসা (আঃ) ঘুমিয়ে পড়লে মাছটিতে প্রানের সঞ্চার হয় এবং লাফ দিয়ে সাগরে পরে সাতরে চলতে থাকে যা ইউশা (আঃ) দেখেন কারন তখন তিনি জাগ্রত ছিলেন। (আমি এখানে এই ঘটনা কিছুটা সংক্ষিপ্ত করে লিখব)। এখানে কিছু ঘটনার পর (যা কোরান শরীফে লিপিবদ্ধ আছে তারা মাছটিকে সাগরের মাঝে অনুসরন করেন, কারন মাছটি যে পথে যাচ্ছিল সে পথের পানি জমাট বেধে শক্ত হয়ে সরু রাস্তার মত হয়ে যাচ্ছিল।
তারা সে রাস্তা অনুসরন দুই সমুদ্রের মিলন স্থালে পৌছালেন এবং সেখানে একজন মানুষ কে দেখলেন বসে থাকতে। ইনিই খিযির (আঃ)। হযরত মুসা (আঃ) তাকে সালাম দিলেন। এবং বললেন তার কাছে ইলম (জ্ঞান) শিখতে এসেছেন যা আল্লাহ পাক শুধু তাকেই দিয়েছেন। খিযির (আঃ) তাকে বললেন, “আপনি আমার আমার সাথে থেকে ধৈর্য্য রাখতে পারবেন না। উত্তরে মুসা (আঃ) বললেন, “আপনি আমাকে ধৈর্য্য শীল পাবেন”। জবাবে খিযির (আঃ) বললেন “আসল তথ্য যখন আপনার জানা নেই, তখন ধৈর্য্য ধরবেনই বা কেমন করে? উদ্দেশ্য এই যে, আমি যে জ্ঞান লাভ করেছি, তা আপনার জ্ঞান থেকে ভিন্ন ধরণের। তাই আমার কাজকর্ম আপনার কাছে আপত্তিকর ঠেকবে। আসল তথ্য আপনাকে না বলা পর্যন্ত আপনি নিজের কর্তব্যের খাতিরে আপত্তি করবেন।” জবাবে মুসা (আঃ) বললেন তিনি অবশ্যই ধৈর্য্য ধারন করবেন, এবং খিযির (আঃ) কে কোন বিরক্ত করবেন না। খিযির (আঃ) তাকে শর্ত দিলেন তার কাজ মুসা (আঃ) এর কাছে যতই আজব লাগুক না কেন সে কোন প্রশ্ন করতে পারবেন না, পরে তিনি ঐ কাজের ব্যাখ্যা নিজেই মুসা (আঃ) কে দিবেন।
মুসা (আঃ) ওই শর্ত মেনে খিযির (আঃ) এর সাথে চললেন। কিছু দূর যাবার পর তাদের সামনে একটি বড় নদী পড়ল, খেয়া মাঝি খিযির (আঃ) কে চিনতেন তাই তার কাছ থেকে কোন ভাড়া নিল না। খিযির (আঃ) নৌকা দিয়ে অপর পাড়ে নেমেই নৌকার একটা তক্তা খুলে নৌকাটি ফুটো করে দিল। মুসা (আঃ) সাথে সাথে এর প্রতিবাদ করলেন, “বললেন নৌকার মাঝি তার সাথে এত ভালো ব্যাবহার করল আর সে কিনা নৌকাটি ফুটো করে দিলেন?” খিযির (আঃ) বললেন, “আমিতো পূর্বেই আপনাকে সাবধান করে দিয়েছিলাম যে আপনি আমার কার্য্য কলাপের ওপর ধৈর্য্য রাখতে পারবেন না।” মুসা (আঃ) সাথে সাথে তার প্রতিশ্রুতি স্বরন করে ক্ষমা চেয়ে নিয়ে খিযির (আঃ) এর সাথে চলতে থাকলেন। (চলতে থাকবে)